বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনা সদর উপজেলার ৯নং এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের একটি গ্রামের নাম জেলখানা। নাম শুনে মনে হতে পারে এখানে কোনো কারাগার রয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা আসলেই বন্দী জীবনের মতোই কষ্টকর। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, রাস্তাঘাটহীন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত এ গ্রামবাসী উন্নয়ন থেকে যুগের পর যুগ পিছিয়ে পড়েছে। জেলখানা গ্রামের চারপাশ ঘিরে খরস্রোতা পায়রা নদী, আর ভেতরে আদিম যুগের মতো ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তা। ২০০৩ সালে এক হাজার মিটার ইট বিছিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হলেও, আজ সেই সড়ক খানাখন্দে ভরা ও চলাচলের অযোগ্য। বর্ষায় হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে, কাদা-মাখা পথে কোমলমতি শিশুরা ভিজে-গোসল করা পোশাক পরে স্কুলে যায়। অসুস্থদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়ার মতো জরুরি কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো ক্লিনিক নেই, সাইক্লোন শেল্টার নেই, নেই নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থানীয়রা বলেন, একবার চিকিৎসা অভাবে এক শিশুর মৃত্যুও ঘটেছে। আজ (শনিবার) সকাল ১০টায় সোনালী স্বপ্ন যুব সংসদ-এর আয়োজনে জেলখানা চৌমুহনী বাজারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান হাফেজ আল-আমীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান, ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সেলাইমান কবির ইউনুস, সদস্য সচিব আক্তারুল হক, জুয়েল ম্যালকারসহ প্রমুখ। মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি মোঃ রাজীব গ্রামের ১৩ দফা উন্নয়ন দাবি উত্থাপন করেন। বক্তারা বলেন, দক্ষিণবঙ্গের জেলখানা, চারাভাঙ্গা ও ঝিনইবাড়িয়া গ্রামগুলো এখনো উন্নয়ন বঞ্চিত। এখানে মোবাইল ফোনে কথা বলতেও নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়াতে হয়, ইন্টারনেট ব্যবহার প্রায় অসম্ভব। স্থানীয়দের দাবি, মাঝে মাঝে সরকার বরাদ্দ দিলেও তা জনগণের কাছে পৌঁছানোর আগেই কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির পকেটে চলে যায়। ফলে বছরের পর বছর বন্দী জীবনের মতো কাটাতে হচ্ছে তাদের। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার যুগে দাঁড়িয়ে দক্ষিণবঙ্গের জেলখানা গ্রামের মানুষ এখনো ন্যূনতম যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তারা বলছে, অবহেলা নয়—এবার উন্নয়ন চাই, মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি চাই।

মোঃ সোহরাব হোসেন বরগুনা জেলা প্রতিনিধি