বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী—এই তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত বরগুনা-১ আসন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দলের কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহ-স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক আসমা আজিজ। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় এই নারী নেত্রী বরগুনার মাঠপর্যায় ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিজস্ব অবস্থান গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও ত্যাগী ভূমিকার কারণে তিনি ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন। আসমা আজিজের জন্ম বরগুনা সদর উপজেলার চরকলোনী এলাকায়। তিনি মরহুম মো. আব্দুল আজিজ (বিএসসি) ও শামসুন্নাহারের কন্যা। পারিবারিকভাবেই জাতীয়তাবাদী আদর্শে বেড়ে ওঠেন তিনি। তার পিতা ছিলেন ৪নং কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এবং বাস্তহারা ছিন্নমূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা। বড় ভাই নাজমুল হাসান ফরহাদও ছাত্রদল ও যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পেশায় একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী আসমা আজিজ। তিনি মাস্টার্স অব ল (Master of Laws) ডিগ্রিধারী এবং বর্তমানে ঢাকার উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে বসবাস করছেন। রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও দায়িত্বপথ ২০০০ সালে জেলা ছাত্রদল, বরগুনা শাখার কর্মী হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ধীরে ধীরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত হন। রাজনৈতিক দায়িত্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ২০০০–২০০৮: সক্রিয় কর্মী, জেলা ছাত্রদল, বরগুনা।২০২১: সদস্য, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।২০২৩: সদস্য, বিএনপি সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি। ২০২৪: সমন্বয়ক, বরিশাল বিভাগ মহিলা দল।২০২৫: সদস্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে “নারীদের অবদান” যোগাযোগ কমিটি।বর্তমান পদবী: সহ-স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আসমা আজিজ একাধিকবার হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় কাওরানবাজারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে আওয়ামী সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে অংশ নিতে গিয়ে আবারও হামলার শিকার হন। একই বছর ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের প্রতিবাদে কাকরাইলে পুলিশের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ও ২০২৪ সালের আন্দোলনেও আহত হন তিনি, বিশেষ করে উত্তরা ও সিএমএম কোর্টে টিয়ারশেল নিক্ষেপে গুরুতর আঘাত পান। রাজনৈতিক কারণে তার নামে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে।সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা ও গণসংযোগ , নিজ জেলা বরগুনায় ছাত্রদল ও মহিলা দলের কর্মীদের আর্থিক ও সাংগঠনিক সহায়তা দিয়ে আসছেন আসমা আজিজ। ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা স্থানীয় রাজনীতিতে প্রশংসিত হয়। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের পর তিনি তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। সামাজিক ও শিক্ষা অঙ্গনেও সক্রিয় আসমা আজিজ বর্তমানে আয়লা কলেজ, বরগুনা’র সভাপতি এবং জেলা বাস্তহারা ছিন্নমূল কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে জনসংযোগ, লিফলেট বিতরণ এবং দলীয় কর্মীদের সংগঠিত করে চলেছেন। স্থানীয়রা মনে করেন, তার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় হয়েছে।জনপ্রিয়তা ও সম্ভাবনা ,স্থানীয় ভোটার ও নেতাকর্মীরা জানান, বরগুনা-১ আসনে আসমা আজিজকে মনোনয়ন দিলে বিএনপি নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে। তরুণ প্রজন্ম ও নারী ভোটারদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত বাড়ছে। আসমা আজিজ বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি। দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমার রাজনীতির লক্ষ্য। আগামী নির্বাচনে বরগুনা-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেলে জনগণের আস্থা অর্জন করবো—এটাই আমার বিশ্বাস। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা-১ আসনে বিএনপির তরুণ ও নারী নেতৃত্বের মধ্যে আসমা আজিজের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি যদি দলীয় মনোনয়ন পান, তবে এ আসনে এক নতুন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেবে—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।